ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে গেল সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। এর আগের সপ্তাহেও শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ছয় হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন বাড়ে ডিএসইতে।
ফলে টানা দুই সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য তার আগে টানা ছয় সপ্তাহের পতনে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারায় ডিএসই। এ হিসাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা হারানোর পর শেয়ারবাজারে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ফিরে এলো।
বাজার মূলধন সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। গেল সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ। আর লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশের বেশি।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৭৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে নয় হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ছয় হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এ হিসেবে দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ১৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর আগে শেয়ারবাজার টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকায় ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ৩৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৩ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৯৯ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তার আগের ছয় সপ্তাহের টানা পতনে সূচকটি কমে ৪৯৩ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকরে পাশাপাশি টানা দুই সপ্তাহ বেড়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৪১ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তার আগে ছয় সপ্তাহের টানা পতনে সূচকটি কমে ১৭০ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।
অপরদিকে ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১৭ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২২ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হলেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছ, কমেছে তার থেকে বেশি। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৬টির। আর ৮৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৬৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৭১৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে চার হাজার ৩৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৭৩৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৭১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ অবদান ছিল।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, রবি, লাফার্জহোলসিম, সামিট পাওয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিবিবি পাওয়ার, লুব-রেফ এবং ওরিয়ন ফার্মা।